দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানবিক কর্মকাণ্ডে একের পর এক উদ্ভাবনী পদক্ষেপ
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা যেন এক নতুন ইতিহাস লিখছে। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ একের পর এক কার্যক্রম হাতে নিয়ে বদলে দিচ্ছেন জনপদের চেহারা। কোথাও পরিবেশ রক্ষায় কঠোর অভিযান, কোথাও উন্নয়নকাজের দ্রুত বাস্তবায়ন, আবার কোথাও মানবিক উদ্যোগ—সব মিলিয়ে ভালুকায় তৈরি হয়েছে নবজাগরণের আবহ।
ইউএনওর দূরদর্শী পরিকল্পনা ও তদারকিতে ভালুকায় উন্নয়ন কার্যক্রমে এসেছে গতিশীলতা। উপজেলা ও পৌর এলাকায় প্রায় ৪০০ রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার স্থানীয়দের দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব করেছে। “যেখানে সমস্যা, সেখানেই সমাধান”—এই নীতিতে এগিয়ে চলছে প্রশাসন।
নগর ব্যবস্থাপনায় এসেছে আধুনিকতা। যানবাহনের জন্য পার্কিং সেড, শতাধিক ওয়েস্ট বাসকেট বিতরণ, নন-মটরাইজড ভ্যান ও ডিপিপি প্রণয়ন করে বর্জ্য অপসারণে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। কোরবানির সময় প্লাস্টিক ব্যাগ বিতরণও ছিল সময়োপযোগী উদ্যোগ।
স্থানীয়রা বলছেন, আগে যেখানে বর্জ্য অপসারণে দিন লেগে যেত, এখন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিষ্পত্তি হচ্ছে।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় রাজস্ব আহরণেও এনেছেন স্বচ্ছতা। অস্থায়ী পশুর হাট উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দিয়ে বিগত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। স্থানীয় সরকার কর্মকর্তারা বলছেন, “এটি ভালুকার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”
শিক্ষার মানোন্নয়নেও ইউএনওর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ২০টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ, এবং মেয়েদের জন্য হাইজেনিক কর্নার স্থাপন প্রকল্প ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ চলাকালে নকল রোধে কঠোর অবস্থান নেন ইউএনও। অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বিভিন্ন শিক্ষককে বরখাস্তসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তরুণ প্রজন্মকে মাদকমুক্ত রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, প্রতিযোগিতা আয়োজন ও ‘তারুণ্যের উৎসব’ আয়োজন করা হয়েছে।
এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, “ক্রীড়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে আমরা নতুন অনুপ্রেরণা পেয়েছি।”
অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে থেকেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইউএনও। বিডব্লিউটিএ কার্ড লটারির মাধ্যমে বিতরণ, সাবমার্সিবল টিউবওয়েল প্রদান, শীতবস্ত্র বিতরণ এবং দুই শতাধিক ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, এর ফলে সুবিধাবঞ্চিতদের আস্থা বেড়েছে প্রশাসনের প্রতি।
জুলাই শহীদদের কবরস্থান সংরক্ষণ, তাঁদের স্মরণে রাবার স্ট্যাম্প নির্মাণ, ও খাল খননের উদ্যোগ স্থানীয় ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে এসব উদ্যোগ তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, এবং সরকারি নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করছেন ইউএনও হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
সম্প্রতি শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদে সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, “এত সুশৃঙ্খলভাবে পূজা আগে কখনো হয়নি। ইউএনও সাহেবের কঠোর নজরদারির কারণেই সব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”
পরিবেশ রক্ষায় একদিনে এক লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নজর কাড়ে। উপজেলা পরিষদ মাঠ সংস্কার, মডেল মসজিদে ছাদবাগান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সোলার প্যানেল, পাবলিক লাইব্রেরি সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে অভিভাবক ছাউনি, ও “গ্রীন অ্যান্ড ক্লীন ভালুকা” কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অবকাঠামোয় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অবৈধ দখল ও দূষণ রোধে নেন কঠোর অবস্থান। হাইকোর্টের নির্দেশে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, শিসা ফ্যাক্টরি বন্ধ, ও মৎস্য খামারে মরা মুরগির নাড়িভুড়ি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা—এসব উদ্যোগ জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উচ্ছেদ হওয়া দোকানিদের পুনর্বাসনে তিনি তৈরি করেন ২৮টি নতুন টি-স্টল, যেগুলোর নামকরণ করা হয়েছে “মেঘমালা”, “তিথিডোর”, “চারুদ্বীপ”, “উড়োচিঠি” ও “ছায়াবীথি” নামে। এসব দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা এখন ভালুকার নতুন সৌন্দর্যের প্রতীক।
ভালুকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা বলছেন—
“উন্নয়ন যেমন হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাচ্ছে। ইউএনও হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ একজন কর্মঠ, সৎ ও মানবিক প্রশাসক হিসেবে ভালুকার উন্নয়নে কাজ করছেন। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করতে পেরে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির এক স্থানীয় নেতা বলেন, “দীর্ঘদিন পর আমরা এমন একজন প্রশাসক পেয়েছি, যিনি মানুষের কথা শোনেন, বোঝেন এবং সমাধানের চেষ্টা করেন। তিনি ভালুকায় উন্নয়ন ও সেবার এক নতুন ধারা তৈরি করেছেন।”
উন্নয়ন, স্বচ্ছতা, মানবিকতা ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের সমন্বয়ে ভালুকা আজ প্রশাসনিক উদ্ভাবনের মডেল হয়ে উঠছে। ইউএনও হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ-এর নেতৃত্বে ভালুকা এখন টেকসই উন্নয়ন ও সুন্দর জীবনের পথে এগিয়ে চলেছে—একটি “মডেল উপজেলা” হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে।










