ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে সোমবার তৈরি হয় আইনি নাটকীয়তা। দুপুরে হাইকোর্ট নির্বাচন ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে, প্রার্থী এস.এম. ফরহাদ ও বিএম ফাহমিদা আলমের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তদন্তে’র জন্য নির্বাচন কমিশনকে ১৫ দিন সময় দেয়। এতে নির্বাচন কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু বিকেলে চেম্বার আদালত হাইকোর্টে’র আদেশ স্থগিত করে দেয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুবে’র এ রায়ে নির্বাচন আয়োজনে’র পথে বাধা কেটে যায়।
ডাকসুর অতীত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
১৯২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক বছর পর থেকেই ছাত্ররাজনীতি’র কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ডাকসু।
ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮-৫২): ডাকসুর নেতারা ছিলেন আন্দোলনের সামনের কাতারে।
স্বাধীনতা’র সংগ্রাম (৬০–৭১): ছয় দফা দাবি থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ডাক—সব জায়গায় ডাকসুর ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন (৮০–৯০ দশক): গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ডাকসু ছিল প্রধান প্ল্যাটফর্ম।
এ কারণেই ডাকসু কেবল একটি ছাত্র সংসদ নয়, বরং জাতীয় রাজনীতি’র নেতৃত্ব তৈরির উর্বর ক্ষেত্র।
বর্তমান প্রেক্ষাপট
২০০০ সালে’র পর থেকে দীর্ঘ সময় ডাকসু নির্বাচন হয়নি। প্রায় দুই দশক পর ২০১৯ সালে নির্বাচন হলেও তা নানা বিতর্কে আচ্ছন্ন ছিল। অনেক শিক্ষার্থী তখনও প্রশ্ন তুলেছিলেন—ডাকসু কি তার ঐতিহাসিক মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে?
সাম্প্রতিক এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া তাই নতুন করে আলোচনায় এসেছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছে, এবার অন্তত ডাকসু একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনী উদাহরণ স্থাপন করবে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা
আশা: অনেকে মনে করছেন, চেম্বার আদালতে’র সিদ্ধান্তে নির্বাচন সামনে এগোনো’র পথ পরিষ্কার হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য ইতিবাচক।
সন্দেহ: আবারও কেউ কেউ মনে করেন, অভিযোগে’র পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া নির্বাচন হলে আস্থার সংকট থেকেই যাবে।
এ দ্বিধা প্রমাণ করছে, ডাকসু শুধু একটি নির্বাচন নয়, বরং শিক্ষার্থীদে’র ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও আস্থার প্রশ্নও এর সঙ্গে জড়িত।
সামনে পথ
এখন দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাঁধে—
- অভিযোগে’র সঠিক তদন্ত,
- সুষ্ঠু ভোট আয়োজন,
- এবং শিক্ষার্থীদে’র আস্থা ফিরিয়ে আনা।
ডাকসুর ইতিহাস যেমন গণতন্ত্রের পাঠ দিয়েছে, তেমনি বর্তমান প্রেক্ষাপটেও এটি হতে পারে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবনে’র পরীক্ষাগার।












