নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে চলছে ব্যস্ততা, মাত্র দুই দিনে’র মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দীর্ঘ ৬ বছর পরে’র ডাকসু নির্বাচন। আগামি ৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে— আর এর আগে’র দিন (৭ সেপ্টেম্বর, রোববার) শেষ হলো প্রচারণা’র শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সৌহার্দ্যময় পরিবেশে নির্বাচনী কার্যক্রম।
প্রচারণা গত ২৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় এবং শেষ দিন পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র যেমন, টিএসসি,ক্যান্টিন,কার্জন হল,অনুষদ ভবন ও হল প্রাঙ্গণে সরাসরি প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে-প্রার্থীরা লিফলেট বিলি, পোস্টার এবং মুখোমুখি ভোট চাওয়ার কাজ চালিয়ে গেছেন, রাত ১১টা পর্যন্ত।
প্রচারণা’র অন্যতম আকর্ষণ ছিল লিফলেটে’র সৃজনশীলতা—এক প্রার্থী ছাপিয়েছেন ১,০০০ টাকা নোটে’র মতো, অন্যজন তৈরি করেছেন মার্কিন এক ডলার আকৃতি’র প্রচারপত্র। পাশাপাশি পেপার কাটিং, বিড়াল আকৃতি’র নোটিশ, হাতের পাখা, খেলার ব্যাড-বল ইত্যাদি দিয়ে তারা ভোটারদে’র মন জয় করেছেন। তবুও, প্রচারণা’র ফলে পড়ে থাকা কাগজে’র স্তূপে পরিবেশ দূষণে’র সমালোচনাও উঠেছে।
কেন্দ্রীয় প্রার্থীরা ছাড়াও হল সংসদের প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে’র আবাসিক ছাত্রদে’র ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইছেন। নিজস্ব পরিকল্পনা ও ইশতেহার জানাচ্ছেন, ডাইনিং, লাইব্রেরি, জিমনেসিয়াম, খেলাধুলার সরঞ্জামসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে’র প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এই সরাসরি কথোপকথন ভোটে’র ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে-বিশ্লেষকরা এই দিকটিও উল্লেখ করেছেন।
নির্বাচনী বিশ্লেষকরা মনে করছেন-ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে প্রতিযোগিতা হবে তীব্র। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুথ সংখ্যা বাড়িয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘনে’র অভিযোগে তদন্ত-সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণে’র কথা জানিয়েছে।
নিরাপত্তায়-বহিরাগতদে’র প্রবেশ নিষিদ্ধ, সাংবাদিকদে’র জন্য ব্যবস্থা, ভোটের দিন ক্যাম্পাসে মোতায়েন থাকবে অধিক নিরাপত্তা বাহিনী।জীবনে’র গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে ভোট দিতে চলা অনেক শিক্ষার্থী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
রাজনীতি ও ইতিহাস বিভাগের ছাত্র জিলহজ্জ শেখ বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, যাতে আসল প্রতিনিধি উঠে আসে এবং নির্বাচিতরা ইশতেহার ভুলে না যায়।” মার্কেটিং বিভাগে’র আশিকুর রহমান যোগ করেন, ক্যাম্পাসে উৎসবে’র পরিবেশ দেখে মন ভালো লাগছে-সবাই ভরসার সাথে ভোট দিতে চাইছেন।
‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে’র ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন, “ভোট পরীক্ষা সময়ে’র মতো হচ্ছে; ডাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেবো; আবাসন সংকট নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করব”।
ছাত্রদল মনোনীত আবিদুল ইসলাম খান বলেন, “নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, সমান অধিকার নিশ্চিত করা, সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা-এসবই আমাদে’র অগ্রাধিকার”।
তানভীর বারী হামিম (ছাত্রদল জিএস প্রার্থী) লিপিবদ্ধ করেন, “১১ দিন প্রচারণায় ধাপে ধাপে সকলের সাথে যুক্ত হয়েছি; পরিকল্পনা নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি”।
বৈষম্য বিরোধী ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের মন্তব্য করেন, “নারীদে’র ভোটকেন্দ্র দূরে রাখা, সেনা মোতায়েনে’র আশঙ্কা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে; প্রশাসনের সময় আছে-৫৬-বছর পর ডাকসু ফিরে আসছে, শিক্ষার্থীরা এর সঠিক ব্যবহার করুক সে নিশ্চয়তা দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব”।
প্রচারণার শেষ দিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে ৭টি নিরাপত্তা চৌকি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্বাচনের দিন—সোমবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস সাধারণ প্রবেশের জন্য বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র বৈধ আইডি কার্ডধারীরা প্রবেশ করতে পারবে। শিক্ষক/কর্মচারীদে’র পরিবারের সদস্যরা পরিচয়পত্র ফটোকপি দিয়ে প্রবেশ পাবে। জরুরি সেবা ছাড়াও অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
ঢাবি ক্যাম্পাস এখন যেন নির্বাচনী উৎসবে রূপ নিয়েছে-মিছিল, প্রচারণা, আলোড়ন, প্রত্যাশা, সৃজনশীল লিফলেট আর শক্ত নিরাপত্তার ছাপ স্পষ্ট। সময় বোধহয় দ্রুত এগুচ্ছে-কলক্ষণ অপেক্ষা উত্তেজনা ও প্রত্যাশায়। আপনার পাঠক এই প্রতিবেদন থেকে সর্বশেষ নির্বাচনী প্রেক্ষাপট সহজে বুঝবে-এটাই আমার লক্ষ্য।












