ঢাকা, শনিবার:
এমপি কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি এখন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করা হচ্ছে। নিলামে বিক্রির পরিবর্তে গাড়িগুলো সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে (গভর্নমেন্ট ট্রান্সপোর্ট পুল) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
গত বুধবার বিকেলে এনবিআর থেকে পাঠানো চিঠি পাওয়ার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে বন্দরের কার শেডে থাকা গাড়িগুলো পরিবহন পুলে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে এমন নজির না থাকায় কিছু আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সূত্র জানায়, শুল্কমুক্ত সুবিধায় পতিত সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৮টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেন। তবে সরকারের পতনের আগে মাত্র সাতটি গাড়ি ছাড় করা সম্ভব হয়। বাকি ৩১টির মধ্যে একটি গাড়ি আদালতের মামলায় জড়িয়ে আছে, আর ৩০টি গাড়ি এখন সরকারের হেফাজতে রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, বন্দরের ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য ছাড় করানোর নিয়ম অমান্য হওয়ায় গাড়িগুলো নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কাস্টমস ২০২২ মডেলের এসব গাড়ির ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করে ৩ কোটি থেকে ১৬ কোটি টাকা পর্যন্ত।
তবে প্রথম নিলামে সক্রিয় হয়ে ওঠে কাস্টম-নিলাম সিন্ডিকেট। ৮–১৬ কোটি টাকার গাড়ির বিড ধরা হয় মাত্র ১ থেকে ৫ লাখ টাকা, যা ভিত্তিমূল্যের ৬০ শতাংশের কাছাকাছি না পৌঁছায়। নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় নিলাম আয়োজনের কথা থাকলেও সরকার সিন্ডিকেটের কারসাজি ধরতে পেরে সেটি বাতিল করে। পরবর্তীতে নিলাম না করে সরকারি ব্যবহারের জন্য গাড়িগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এনবিআরের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “দীর্ঘদিন ধরে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়িগুলো পড়ে থাকায় তাদের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিলামে যথাযথ দাম না পাওয়ায় সরকার বিকল্পভাবে এগুলো সরকারি পরিবহন অধিদপ্তরে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার এইচ. এম. কবীর বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাড়িগুলো যানবাহন অধিদপ্তরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। নিলাম ছাড়া বিকল্প নিষ্পত্তির বিধান আইনে থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ এই প্রথম।”
তবে এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম বিডার অ্যাসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী। তাঁর দাবি, “গাড়িগুলোর ভিত্তিমূল্য অতিরিক্ত নির্ধারণ করায় নিলামে নামমাত্র দাম উঠেছিল। সরকারের উচিত ছিল নির্বাহী আদেশে নেওয়ার বদলে নিলামে অংশ নিয়ে গাড়িগুলো কেনা। এতে রাজস্বও আসত, নিয়মও মানা হতো।”
বারভিডা-র সাবেক সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শুধু এমপি কোটার গাড়ি নয়, আরও শতাধিক গাড়ি বহু বছর ধরে বন্দরে আটকে আছে। দ্রুত নিষ্পত্তি করা না গেলে এগুলোও অচল হয়ে পড়বে।”
উল্লেখ্য, এই চালানের মাধ্যমে আনা গাড়িগুলোর মধ্যে কয়েকটি আগেই ছাড় করে নিয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ব্যারিস্টার সুমন ও আরও কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য। যাদের গাড়ি এখনো বন্দরে আটকে আছে তাদের মধ্যে রয়েছেন তারানা হালিম, জান্নাত আরা হেনরি, আবুল কালাম আজাদ, এস আল মামুন, মুজিবুর রহমান, সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, সাজ্জাদুল হাসানসহ আরও অনেকে।











