ঢাকা | স্টাফ রিপোর্টার
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি কি না, তা যাচাইয়ে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) ডাটাবেজ হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে— সিআইবিতে ভুল তথ্য দিলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করলে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শাখা ব্যবস্থাপক বা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, এমনকি চাকরিচ্যুতির মতো কঠোর শাস্তিও দেওয়া হতে পারে।
তথ্য গোপনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের সময় কেউ যেন অবৈধ সুবিধা নিতে না পারেন, সে বিষয়ে বিশেষ নজরদারি থাকবে। কোনো কর্মকর্তা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক নয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে— ঋণতথ্য হালনাগাদ ও যাচাইয়ে কোনো গাফিলতি বা অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না। ভুল তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সরাসরি জবাবদিহির মুখে পড়বেন।
তদারকিতে বাড়তি প্রস্তুতি
নির্বাচনের আগে সঠিক ও হালনাগাদ তথ্য নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ ইতোমধ্যে দুটি সভার আয়োজন করেছে। একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৯ অক্টোবর, অপরটি হবে ৩ নভেম্বর।
সভাগুলোয় দেশের তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিআইবি শাখার প্রধান ও রিপোর্টিং কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।
এ বৈঠকগুলোয় মূলত সিআইবি ডাটাবেজে তথ্য আপলোডের প্রযুক্তিগত সমস্যা, তথ্যের নির্ভুলতা, আধুনিকায়নের প্রয়োজন এবং প্রার্থীদের ঋণতথ্য যাচাইয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“আমাদের লক্ষ্য হলো যেন কোনো অনিয়ম না ঘটে। কেউ খেলাপি হয়েও প্রার্থী হতে না পারেন— সেজন্য এবার বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যদি তথ্য গোপন করেন, তাহলে সর্বোচ্চ জরিমানা ও চাকরিচ্যুতির মতো শাস্তিও দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা চাই নির্বাচন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হোক । অর্থনৈতিক ভাবে দায়মুক্ত ও নৈতিক ব্যক্তিরাই যেন প্রার্থী হতে পারেন, সেটিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”
আইনি কাঠামো ও পূর্বপ্রেক্ষাপট
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে ঋণ নবায়ন বা পরিশোধ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারেন।
মনোনয়ন যাচাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকেন। প্রয়োজন হলে আপিল শুনানির সময় নির্বাচন কমিশনেও ঋণতথ্য উপস্থাপন করেন।
১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই প্রার্থীদের আর্থিক দায় ও ঋণপরিশোধের অবস্থা যাচাই একটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন,
“প্রার্থীদের ঋণের সঠিক তথ্য ব্যাংকগুলো যথাযথভাবে প্রকাশ করবে— এটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম নির্দেশনা ইতিবাচক পদক্ষেপ। অতীতে তথ্য গোপন বা প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ছিল, আশা করছি এবার তা হবে না।”
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রার্থীদের ঋণতথ্য যাচাইয়ের এ উদ্যোগ নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
️ নির্বাচন সামনে রেখে সতর্কতা
সরকার ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কঠোর তদারকি স্বচ্ছ ও নৈতিক নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক কর্মকর্তারা, ঢাকা পোস্ট











