ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করে সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব ও দুর্বল বার্তা দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্যে দলের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দলের ভেতরকার সূত্রগুলো বলছে, নেত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে “হুংকার ও দৃঢ় অবস্থানের ঘাটতি” স্পষ্ট।
নিউ টাউনে আওয়ামী শীর্ষদের জরুরি বৈঠক
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কলকাতার নিউ টাউনের শাপুরজিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা জানান, শেখ হাসিনার দিক থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ায় তারা গভীর হতাশায় পড়েছেন। তাদের প্রত্যাশা ছিল, নেত্রী “প্রত্যাবর্তন আন্দোলন” নিয়ে কোনো শক্ত বার্তা বা কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। কিন্তু তার সাক্ষাৎকারে সে ধরনের কোনো ইঙ্গিত না থাকায় বৈঠকে নিরাশা নেমে আসে।
নেত্রীর ‘মুক্ত অবস্থায়’ মন্তব্যে ক্ষোভ
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ই-মেইলে পাঠানো সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন,
“আমি দিল্লিতে বেশ মুক্ত অবস্থায় আছি। পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে দেশে ফেরার ইচ্ছে নেই।”
তার এই মন্তব্য দলের ভেতরে আরো হতাশার ঢেউ তুলেছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা। তারা মনে করেন,
“এমন এক সময়, যখন দল নিষিদ্ধ ও নেতৃত্ববিহীন অবস্থায়, তখন নেত্রীর কাছ থেকে আমরা একটি দৃঢ় ও অনুপ্রেরণামূলক বার্তা আশা করেছিলাম।”
‘আর কতদিন বসে থাকব?’
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা প্রশ্ন তোলেন,
“নিষিদ্ধ অবস্থায় দল আর কতদিন এভাবে নিষ্ক্রিয় বসে থাকবে?”
ওবায়দুল কাদের বৈঠকে দলের “ভয়াবহ সংকট” তুলে ধরেন এবং কিছুটা হতাশাও প্রকাশ করেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
এসময় দলের ভেতরকার বিভাজন ও বিকল্প নেতৃত্বের প্রসঙ্গও ওঠে আসে। কয়েকজন নেতা মত দেন—
“যদি শেখ হাসিনা বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি নেতৃত্ব দিতে না পারেন, তবে অন্তত অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব নির্ধারণ করা প্রয়োজন।”
শেখ হাসিনার অবস্থান: ‘শুধু বৈধ সরকারের অধীনেই ফিরব’
দিল্লিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন,
“আমি শুধু বৈধ সরকারের অধীনে দেশে ফিরব, যেখানে সংবিধান সুরক্ষিত থাকবে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনো সরকার গঠিত হলে তার অধীনে আমি কখনোই বাংলাদেশে ফিরব না।”
এই বক্তব্যে কলকাতায় অবস্থানরত দলীয় নেতারা চরম হতাশ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচনের আগে ঢাকায় ফেরার ইঙ্গিত
তবে শেখ হাসিনা তার সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন,
“আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয় এবং আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়, তাহলে আমি ঢাকায় ফেরার কথা বিবেচনা করব।”
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ, এবং তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে তার দল আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করবে। এই অবস্থায় দলের অনেক নেতাই দিশাহীন হয়ে পড়েছেন।
‘নতুন কৌশল কি প্রয়োজন?’
বৈঠকে দলের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব দেন,
“শুধু প্রতীক্ষায় না থেকে বিকল্প রাজনৈতিক কর্মপন্থা নেওয়া উচিত।”
তবে সভা শেষে ওবায়দুল কাদের কোনো নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি বলে সূত্র জানিয়েছে। ফলে দলের অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি ও হতাশা আরও গভীর হয়েছে।
উপসংহার:
শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যে যেখানে সতর্ক কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে দলীয় নেতারা প্রত্যাশা করেছিলেন দৃঢ়তা ও স্পষ্ট নির্দেশনা। ফলস্বরূপ, কলকাতায় আশ্রিত আওয়ামী শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে হতাশা ও নেতৃত্ব সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করছে।
তথ্যসূত্র-আমার দেশ










