স্টাফ রিপোর্টার:
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বর মাসেই গণভোট দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একইসঙ্গে শুক্রবারের মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এসব দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. তাহের বলেন, “জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন চায়। আমরা আইনগত ভিত্তিতে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। এটি বাস্তবায়নের জন্য দুটি প্রস্তাব—একটি জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং আরেকটি নির্বাচনের দিন একসঙ্গে গণভোট। আমরা নির্বাচনের আগে গণভোটের নিশ্চয়তা চাই। এটি আমাদের সুস্পষ্ট দাবি।”
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে নানা মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চলছে। “ফেসবুকে মনগড়া প্রশ্ন তুলে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে যে, জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় কি না। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চাই এবং সেই রায়ের ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই।”
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. তাহের বলেন, “ক্ষমতায় আসার পর সরকারের তিনটি ওয়াদা ছিল, যার একটি হলো সংস্কার। এটিই ড. ইউনূস সরকারের বড় অর্জন হতে পারে। এটি বাস্তবায়ন হলে নতুন বাংলাদেশ গঠনের পথ খুলবে।”
তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। “কেউ কেউ বলছে, এটি একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে—এটি সম্পূর্ণ অসত্য। এখানে কোনো দলের প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। আমরা নিম্নকক্ষে পিআর সিস্টেম নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম, সেটিও রাখা হয়নি।”
ডা. তাহের বলেন, এনসিপি ছাড়া প্রায় সব দলই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। বিএনপি ও জামায়াত পাশাপাশি বসেই তাতে সই করেছে। “৬০ থেকে ৬৫টি বিষয়ে শতভাগ একমত হয়েছি। কোনো কোনো বিষয়ে ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ সমঝোতা হয়েছে। এখন যদি প্রতিটি ভিন্নমত নিয়ে গণভোট করতে হয়, তাহলে প্রতিদিন ভোট দিতে হবে, যা বাস্তবসম্মত নয়।”
তিনি বলেন, “জুলাই সনদের ওপর গণভোট হবে, আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়। এই দুটি একসঙ্গে করলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আমরা চাই নির্বাচন হোক সুন্দর, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক।”
ডা. তাহের সরকারের উদ্দেশে বলেন, “এখন সময় খুব সীমিত। প্রতিটি ঘণ্টাই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যেন দেরি না করে আজ অথবা সর্বোচ্চ আগামীকাল জুলাই সনদের বাস্তবায়নে আদেশ জারি করে। তা না হলে জনগণের আস্থা নষ্ট হবে এবং আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, ইসি ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজস্ব নাম ও প্রতীকে নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছে। “বিএনপি প্রথমে এতে আপত্তি করেনি, কিন্তু পরে মত পরিবর্তন করেছে। এখন যদি তাদের কথায় আইন পরিবর্তন হয়, তাহলে ইসি ও সরকার দুটিই বিতর্কিত হবে। আমরা চাই, সবাই হাসিখুশি পরিবেশে নির্বাচন করুক। ফ্যাসিবাদ তাড়ানোর পর বাংলাদেশ আর কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, হামিদুর রহমান আযাদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।










