ঢাকা | ১৪ অক্টোবর ২০২৫| SutiaNews
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী নেত্রীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বিএনপিতে।
দলটির হাইকমান্ড সূত্র জানায়, কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারীকে (১৫টির বেশি আসনে) সরাসরি মনোনয়ন দেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এতে করে তরুণ এবং অভিজ্ঞ নারী নেত্রীদের জন্য রাজনীতির মাঠে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের নারীসমাজ এখনও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। জাতীয় সংসদে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ বাড়ানো ছাড়া সমতা ও ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। তাই দলীয় সংস্কার কমিশন থেকেও এই বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
📊 অতীতের নির্বাচন এবং নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ
বাংলাদেশের নির্বাচনি ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায়:
🗳️ ১৯৯১ সালে ৫ জন নারী নির্বাচিত
🗳️ ২০০১ সালে ৬ জন
🗳️ ২০০৮ সালে ১৯ জন
🗳️ ২০১৮ সালে ২২ জন
🗳️ সর্বশেষ ২০২৪ সালে ১৯ জন নারী নির্বাচিত হন
তবে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন থাকায়, প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব নিয়ে বিতর্ক থেকেই গেছে।
🧕 এবার এগিয়ে আসছেন কোন নারী নেত্রীরা?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক নারী নেত্রী ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে মাঠে গণসংযোগ শুরু করেছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ রয়েছেন, যাদের জনপ্রিয়তা ও দলের প্রতি ত্যাগ-ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।
🔹 ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল) আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
🔹 শামা ওবায়েদ
প্রয়াত মন্ত্রী কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে। বিএনপির সাবেক মহাসচিবের উত্তরসূরি হিসেবে ফরিদপুর-২ আসনে মনোনয়ন চাইছেন।
🔹 আফরোজা খানম রিতা
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। মানিকগঞ্জ-৩ আসনে জয়ের জন্য শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক ত্যাগের কারণে তাকে ‘অপরিহার্য’ প্রার্থী হিসেবে দেখছে দল।
🔹 অ্যাডভোকেট সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া
সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সহ-সম্পাদক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ বা নাটোর-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
🔹 শাম্মী আখতার
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে।
🔹 সালিমা তালুকদার আরুনী
প্রয়াত ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের মেয়ে। জামালপুর-৪ থেকে মনোনয়ন চাইছেন।
🔹 তাহসিনা রুশদীর লুনা
নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। এবার সিলেট-২ আসনে অংশ নিতে চান।
🔹 নাসিমা আক্তার কল্পনা
প্রয়াত বিএনপি নেতা পিন্টুর স্ত্রী। ঢাকার একটি আসনে নির্বাচন করতে চান।
🔹 আফরোজা আব্বাস
মহিলা দলের সভানেত্রী ও মির্জা আব্বাসের স্ত্রী। ঢাকা-৯ আসনের মনোনয়ন চাইছেন।
🔹 মাহরীন খান
ড. মঈন খানের কন্যা, প্রবাসে থেকেও দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। নরসিংদীর একটি আসনে মনোনয়ন চাইছেন।
🔹 হাসিনা আহমেদ
সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী, কক্সবাজার-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
🧭 রাজনীতিতে নারীর অগ্রযাত্রা—অথচ দীর্ঘ পথ বাকি
রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের বড় উদাহরণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা ও স্পিকার। তবুও দলীয় কাঠামো ও মাঠ পর্যায়ে নারীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব নারীদের প্রতিযোগিতার মাঠ সংকুচিত করে ফেলেছে। সামাজিক বাধা এবং সংসারের দ্বৈত দায়িত্বও অনেক নারী নেত্রীকে পিছিয়ে দেয়।
বিএনপি কী বলছে?
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন:
“নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে আমরা দলীয়ভাবে সরাসরি ৫ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেব। নারী রাজনীতিকদের অংশগ্রহণ বাড়লে তৃণমূল পর্যায়ে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।”
সংরক্ষিত আসন বনাম সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা
বর্তমানে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে ১০০ আসনে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি সেই প্রস্তাবে শর্ত সাপেক্ষে সম্মতি জানালেও এবার নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।
বিএনপির ইতিহাসে নারীর নেতৃত্ব
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং দীর্ঘ সময় দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেত্রী। দীর্ঘ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং দলের পুনর্গঠনে তার অবদান অনস্বীকার্য।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, তিনি যদি শারীরিকভাবে সক্ষম থাকেন, এবারও একাধিক আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।
বিএনপির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে মূল্যায়নের একটি যুগান্তকারী ধাপ হতে পারে।
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের নারী নেত্রীদের মঞ্চে নিয়ে আসা, রাজনীতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।










