রোম, ইতালি | বিশেষ সংবাদদাতা
ব্যক্তিগত মুনাফাহীন নতুন ব্যবসা-ধারা সামাজিক ব্যবসা (Social Business) গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন,
“তিন-শূন্য বিশ্ব গঠন কোনো স্বপ্ন নয়, বরং এটি একান্ত প্রয়োজন—এটাই পৃথিবীকে রক্ষার একমাত্র পথ।”
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রাজধানী রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (World Food Forum – WFF) ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে এই আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।
🔹 “তিন-শূন্য বিশ্ব” ধারণা
অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
“আমাদের লক্ষ্য একটি ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গঠন করা—যেখানে
১️⃣ দারিদ্র্য শূন্য হবে,
২️⃣ বেকারত্ব শূন্য হবে, এবং
৩️⃣ কার্বন নিঃসরণ থাকবে শূন্য।
এটি কোনো কল্পনা নয়, এটি বাস্তব প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “ক্ষুধা কোনো অভাবের ফল নয়, বরং বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতার ফলাফল। তাই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।”
🔹 সামাজিক ব্যবসা: নতুন অর্থনীতির কাঠামো
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন,
“পুরোনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা ব্যবস্থা কোটি কোটি মানুষকে পিছিয়ে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে এমন এক নতুন ব্যবসা কাঠামো গড়ে তোলার, যা সমস্যার সৃষ্টি করবে না—বরং সমাধান দেবে। সেই কাঠামোই হলো সামাজিক ব্যবসা—যা ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়, বরং মানবকল্যাণের জন্য।”
তিনি বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে বলেন,
“গ্রামীণ ব্যাংক প্রমাণ করেছে, দরিদ্র নারীরাও উদ্যোক্তা হতে পারেন। গ্রামীণ দানোন অপুষ্টির বিরুদ্ধে কাজ করছে। এসব বাস্তব উদাহরণই দেখাচ্ছে, সামাজিক ব্যবসা কার্যকর এবং বিশ্বব্যাপী প্রয়োগযোগ্য।”
🔹 তরুণদের শক্তিই পরিবর্তনের চালিকাশক্তি
তরুণ উদ্যোক্তা, নারী, কৃষক ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের ভূমিকা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
“আজকের তরুণ প্রজন্ম আগের প্রজন্মের মতো নয়। তারা সৃজনশীল, সংযুক্ত ও প্রযুক্তিদক্ষ। তাদের চাকরি খোঁজার অপেক্ষায় না রেখে, চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করতে হবে।”
তিনি প্রস্তাব করেন, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ তহবিল ও সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন করতে হবে; একই সঙ্গে কৃষি-উদ্ভাবন কেন্দ্র ও জলবায়ু-স্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।
“যদি আমরা তরুণদের ওপর বিনিয়োগ করি, তাহলে শুধু খাদ্যনিরাপত্তাই নয়—আমরা পুরো বিশ্বকেই বদলে দিতে পারব,” বলেন তিনি।
🔹 বৈশ্বিক সহযোগিতার আহ্বান
অধ্যাপক ইউনূস জানান,
“বাংলাদেশ হলো ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যবিরোধী বৈশ্বিক জোটের (Global Alliance Against Hunger and Poverty)’ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমরা এফএও ও জি-২০-এর সঙ্গে প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও নৈতিক সহায়তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি আহ্বান জানান,
“আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি—একটি ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গড়ে তুলতে।”
🔹 উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার ওপর জোর
সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের গুরুত্ব তুলে ধরে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন,
“আজকের বিশ্বে সম্পদ ও প্রযুক্তির অভাব নেই, ভবিষ্যতে আরও থাকবে। কিন্তু প্রয়োজন এমন এক সৃজনশীল চিন্তা ও ব্যবসায়িক কাঠামো, যার মাধ্যমে আমরা নতুন এক পৃথিবী গড়ে তুলতে পারব। যদি আমরা কল্পনা করতে পারি, তবে আমরা তা বাস্তবায়নও করতে পারব।”
📌 মূল বার্তা:
অধ্যাপক ইউনূসের মতে, তিন-শূন্য বিশ্ব গঠন শুধু সম্ভবই নয়, বরং তা মানবজাতির টিকে থাকার শর্ত।











