জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সতর্ক করেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে চলমান শান্তি প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে গোটা অঞ্চল ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। মিসরের শার্ম আল-শেখে আয়োজিত একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
“যদি আমরা এই সমস্যার সমাধান না করি, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব”
বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন,
“যদি আমরা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের নাগরিকদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ এবং আরব ও মুসলিম বিশ্ব এবং ইসরাইলের মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে না পাই, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অনেক ব্যর্থ প্রচেষ্টা অতীতেও দেখা গেছে।”
তিনি বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। পশ্চিম তীর ও গাজায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনই এই দীর্ঘ সংঘাতের একমাত্র বাস্তব ও টেকসই পথ।
শান্তি পরিকল্পনা ও বৈঠকের প্রেক্ষাপট
এই মন্তব্য এমন এক দিনে এসেছে, যেদিন হামাস গাজায় আটক থাকা শেষ জীবিত ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেয়, বিনিময়ে ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে মিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যেখানে বাদশাহ আবদুল্লাহ সহ আঞ্চলিক নেতারা অংশ নিচ্ছেন।
❝ যদি কেউ এটা করতে পারেন, তাহলে তিনিই ট্রাম্প ❞
সাক্ষাৎকারে বাদশাহ বলেন,
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন— ‘এটা এখনই বন্ধ করতে হবে।’ আমরা বলেছিলাম, আপনি জানেন, যদি কেউ এটা করতে পারেন তাহলে তিনি আপনি।”
তবে, শান্তির পথে চ্যালেঞ্জও কম নয়। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান ইসরাইলি সরকার বারবার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ বিষয়ে কড়া ভাষায় বিরোধিতা করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
চুক্তির মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে বিপদ
বাদশাহ আবদুল্লাহ ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা শান্তি চুক্তি নিয়েও সতর্ক করে বলেন,
“এই চুক্তির বিষয়বস্তুর ভেতরেই শয়তান লুকিয়ে আছে।”
তিনি মনে করেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে, যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গাজা নয়, পুরো অঞ্চলের শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
হামাস ও ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে বাদশাহ বলেন, হামাসের সঙ্গে কাতার ও মিশরের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে, এবং তারা আশাবাদী যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী গাজার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার হাতে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।
নেতানিয়াহু প্রসঙ্গে অবিশ্বাস, তবুও আশাবাদ
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করে বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন,
“আমি তার কথায় বিশ্বাস করি না।”
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “ইসরাইলে এমন অনেকে আছেন, যাদের সঙ্গে আরব নেতারা শান্তির জন্য কাজ করতে পারেন।”
দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা, বিপুল প্রাণহানি
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অভিযানে ৬৭,০০০-এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, জানায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে আবদুল্লাহর আহ্বান এক নতুন বাস্তবতার প্রতিফলন— এটি শান্তি অর্জনের একটি “বাস্তব সম্ভাবনার মুহূর্ত”।
“আমার নাতি-নাতনি যেন আমার বাবার মতোই আশা না করে মরতে বাধ্য না হয়”
সাক্ষাৎকারের এক আবেগঘন মুহূর্তে বাদশাহ বলেন,
“আমার বাবা জীবনের শেষের দিকে বলতেন, ‘আমি আমার সন্তানদের এবং তাদের সন্তানদের জন্য শান্তি চাই।’ আমার দুই নাতি-নাতনি আছে; তারা সেই শান্তির যোগ্য।”
তিনি বলেন, নিজের জীবদ্দশায় একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি দেখতে চান, কারণ বিকল্প হল “এই অঞ্চলের শেষ”।
প্রেক্ষাপট: জর্ডান-ইসরাইল সম্পর্ক
১৯৯৪ সালে জর্ডান ও ইসরাইল শান্তিচুক্তিতে উপনীত হয়। যদিও দেশের বহু নাগরিক এর বিরোধিতা করেছিল, তবুও দুই দেশের মধ্যে এখনও নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
জর্ডানের জনসংখ্যার ৫০% এরও বেশি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত, যা এই ইস্যুকে আরও জটিল করে তোলে।
উপসংহার
বাদশাহ আবদুল্লাহর বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক বিবৃতি নয়—এটি ছিল এক সতর্কতা, এক আবেগ, এবং এক জাতির শান্তির জন্য চূড়ান্ত আহ্বান।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কেবল গাজা বা পশ্চিম তীরের সমস্যা নয়—এটি সমগ্র অঞ্চলের অস্তিত্বের প্রশ্ন।
📢 আপনার মতামত জানান: আপনি কী মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বাস্তব সম্ভাবনা কতটা?
📎 লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। নতুন আপডেটের জন্য চোখ রাখুন [www.sutianews.com] -এ।











