স্টাফ রিপোর্টারঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’র কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে’র ফলাফলে নতুন এক সমীকরণ স্পষ্ট হয়েছে। দীর্ঘদিন দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দুই প্রধান ধারার বাইরে থেকেও ইসলামী ছাত্রশিবির এবারে’র নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে। অন্যদিকে একসময় ক্ষমতাধর ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কার্যত ভরাডুবি’র শিকার হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় দেশের রাজনীতি’র আঁতুড়ঘর। এখানকা’র ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধে’র নেতৃত্ব থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতি’র বহু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। আশির দশক থেকে নব্বইয়ে’র দশক পর্যন্ত ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে দৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় বিরোধী রাজনীতিতে থেকে সংগঠনটি ভাঙন, নেতৃত্ব সংকট ও সাংগঠনিক অচলাবস্থায় ভুগছে।
অন্যদিকে শিবিরে’র জন্ম এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। শুরু থেকেই তারা তৃণমূল পর্যায়ে ক্যাডার ভিত্তিক সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। যদিও রাজনৈতিক সহিংসতা’র অভিযোগে সংগঠনটি বারবার বিতর্কে’র মুখে পড়েছে, তবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা তাদের টিকে থাকার মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছাত্রদলের ভরাডুবির কারণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদে’র মতে, ছাত্রদলের পতনের মূল কারণ তাদের নিজেদে’র ভেতরের দুর্বলতা।
সংগঠনহীনতা: দীর্ঘ সময় কার্যকর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড না থাকায় তৃণমূল ভেঙে পড়েছে।
নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব: কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ঘনঘন পরিবর্তন মাঠপর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অকর্মণ্য প্রচারণা: ডিজিটাল যুগেও তারা কার্যক’র প্রচারণা চালাতে ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে প্রতিপক্ষ কৌশল গতভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে।
প্রতিপক্ষে’র শক্তিশালী উপস্থিতি: শিবিরে’র পরিকল্পিত মাঠপর্যায়ের কাজ ছাত্রদলে’র দুর্বল অবস্থাকে আরও নগ্ন করে দিয়েছে।
শিবিরের সাফল্যের কৌশল
ইসলামী ছাত্রশিবির এবারে’র নির্বাচনে যে সাফল্য পেয়েছে তা হঠাৎ আসেনি, বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির ফল।
ধারাবাহিক মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম: হলভিত্তিক সক্রিয়তা ও শিক্ষার্থীদে’র কাছে ধারাবাহি’ক উপস্থিতি ধরে রেখেছে।
বহুমুখী কৌশল: সরাসরি প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহা’র, শিক্ষার্থীদের দাবি ও বাস্তব সমস্যাকে ইস্যুতে পরিণত করেছে।
শৃঙ্খলাবদ্ধ কাঠামো: নেতৃত্বের ঐক্য ও কেন্দ্র থেকে নির্দেশনার সুসংগঠিত বাস্তবায়ন তাদের এগিয়ে দিয়েছে।
মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা: দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস রাজনীতিতে কোণঠাসা থাকার পর হঠাৎ সাফল্য পাওয়ায় তাদের সমর্থকরা দ্বিগুণ উদ্দীপনা’য় কাজ করেছে।
ভবিষ্যতের প্রভাব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে জয় শিবির’কে শুধু তাৎক্ষণিক সুবিধাই দেয়নি, বরং বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। তারা যদি এই অবস্থান ধরে রাখতে পারে, তাহলে জাতীয় ছাত্র রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
অন্যদিকে ছাত্রদলে’র এই ভরাডুবি সংগঠনটি’র জন্য অশনিসংকেত। সাংগঠনিক সংকট নিরসন না করলে তাদের পক্ষে ক্যাম্পাসে পুনরুত্থান কঠিন হবে। আর এমন পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে বিএনপির ছাত্ররাজনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
উপসংহার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’র এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে, ছাত্র রাজনীতিতে প্রভাব ধরে রাখতে শুধু ঐতিহ্য নয়, প্রয়োজন ধারাবাহিক সাংগঠনিক তৎপরতা, সঠিক কৌশল ও নেতৃত্বে ঐক্য। একদিকে যখন ছাত্রদল অতীত গৌরব আঁকড়ে ধরে টিকে থাকার চেষ্টা করছে, তখন শিবির বাস্তববাদী কৌশল ও মাঠপর্যায়ের শক্তি দিয়ে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে।










