নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর চূড়ান্ত ভাষ্য। এই সনদের ভিত্তিতে আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে কমিশনের পক্ষ থেকে পৃথক চিঠির মাধ্যমে দলগুলোকে অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সনদ পাঠানো হলো, তবে বাস্তবায়ন প্রস্তাব এখনো বাকি
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দলগুলোর কাছে পাঠানো এই চূড়ান্ত ভাষ্যে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াসংক্রান্ত কোনো সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এই অংশটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সরকারের কাছে আলাদাভাবে জমা দেওয়া হবে।
চূড়ান্ত ভাষ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাস ও পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত অংশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন আনা হয়েছে।
দুই পর্বে অনুষ্ঠান, তিন হাজার অতিথির আমন্ত্রণ
‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় প্রায় ৩ হাজার অতিথি আমন্ত্রণের পরিকল্পনা করেছে।
অনুষ্ঠানটি হবে দুই পর্বে—
- প্রথম পর্বে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান মাগরিবের নামাজের আগে শেষ হবে।
- নামাজের বিরতির পর দ্বিতীয় পর্বে প্রজেকশন ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে জুলাই সনদ প্রণয়নের পটভূমি প্রদর্শন করা হবে।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মঞ্চ নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বৈঠকের পর।
সনদের পটভূমিতে ইতিহাসের সংশোধন
চূড়ান্ত ভাষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একাধিক ভাষাগত ও তথ্যগত সংশোধন আনা হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো হলো—
- ১৯৭৬ সালের পরিবর্তে ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তন এবং ১৯৭৯ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার উল্লেখ।
- ২০০৬ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা ও ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থা অংশে “লগি-বৈঠা তাণ্ডব” ও “১/১১ সরকার” শব্দবন্ধ যুক্ত করা হয়েছে।
- স্বৈরাচারী শাসকের স্থলে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
- জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত নাগরিকের সংখ্যা “এক হাজার” থেকে পরিবর্তন করে “সহস্রাধিক” বলা হয়েছে।
ঐকমত্য ও সনদের কাঠামো
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপ শেষে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়, যার ওপর ভিত্তি করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
সনদে রাষ্ট্র সংস্কার, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, নির্বাচন ব্যবস্থার পুনর্গঠন, এবং গণভোট আয়োজন সংক্রান্ত ধারা অন্তর্ভুক্ত আছে।
তবে গণভোটের সময় নির্ধারণে এখনো মতভেদ রয়ে গেছে—
- বিএনপি ও তাদের যুগপৎ শরিকেরা নির্বাচনের দিনই গণভোট চান,
- অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি ও আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে।
কমিশনের বক্তব্য
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন,
“সব দলের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ পাঠানো হয়েছে। আগামী শুক্রবারের ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সনদ স্বাক্ষর হবে। আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণে পরবর্তী ধাপে যেতে পারব।”
গত ১১ সেপ্টেম্বর দলগুলোর কাছে সনদের প্রথম চূড়ান্ত ভাষ্য পাঠানো হয়েছিল।
তবে মঙ্গলবার পাঠানো সংস্করণে ভাষাগত সংশোধন ও নতুন প্যারা যোগ করা হয়েছে—বিশেষ করে ‘ঐকমত্যের ঘোষণা’ নামে একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী ভাষ্যের অংশগুলোকেই পুনর্বিন্যাস করেছে।











