ঢাকা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আমরা জাতি হিসেবে ব্যর্থ হতে চাই না। আমরা নতুন বাংলাদেশের কথা বলছি — যেখানে বৈষম্য থাকবে না, থাকবে না ভয়ের সংস্কৃতি। আমাদের তরুণরা জেগেছে, আমাদের মানুষ জেগেছে। এখন সময় নতুন বাংলাদেশ গড়ার।”
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে একথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, নাগরিক অধিকার, সাম্য, সম্প্রীতি এবং জাতিগত ঐক্য নিয়ে গুরুত্বপূর্বক বক্তব্য দেন।
“যেখানে সবাই নাগরিক, সবাই সমান”
ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের ছেলে-মেয়েরা ২৪ জুলাই যে অসাধ্য সাধন করেছে, তার মূল লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ। সে যে ঘরে জন্মাক, ছেলে হোক বা মেয়ে— সবাই নাগরিক। সবাই সমান সুযোগ পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “তারা কেউ বন্দী হয়ে জন্ম নেয়নি। কেউ পালিয়ে থাকার জন্য জন্ম নেয়নি। আমরা তাদের নিজের মতো গড়ে ওঠার, দেশ গড়ার এবং বিশ্বকে কিছু দেওয়ার সুযোগ দিতে চাই।”
ধর্মীয় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
ড. ইউনূস বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনীর মধ্যে ধর্ম পালন করাটা হাস্যকর। আমরা চাই মুক্তভাবে, নির্ভয়ে, বিশ্বাসের ভিতরে যার যার ধর্ম পালন করতে। এটি আমাদের নাগরিক অধিকার, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা দেন: “রাষ্ট্র কোনো নাগরিককে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। রাষ্ট্র আমাদেরকে তালিকা করে দিয়ে দিয়েছে— নাগরিক হিসেবে কী কী পাওয়ার কথা। তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
“আমরা একটি পরিবার, জাতি হিসেবে অটুট”
দেশের সামাজিক ঐক্যের প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, “আমরা একটি পরিবার। মতের ভিন্নতা থাকবে, ব্যবহারের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু জাতি হিসেবে আমাদের এক থাকতে হবে। বিভক্ত হয়ে গেলে আমরা ব্যর্থ হবো।”
তিনি দুর্গাপূজার কাঠামোর মধ্যে ঐক্যের দৃষ্টান্ত টেনে বলেন, “দুর্গাপূজার দশভূজা প্রতিমার প্রতিটি অংশে আছে ঐক্যের প্রতীক — জ্ঞান, সম্পদ, শক্তি, সাহস ও সাফল্য মিলেই অশুভকে পরাজিত করে। এই শিক্ষাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে।”
“আমার নাম নাগরিক — এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমার ওপর কোনো বৈষম্য করা যাবে না। রাষ্ট্র আমাকে যা দেওয়ার কথা সংবিধানে লিখে দিয়েছে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে কোনো কথার মারপ্যাঁচ বা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা চলবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নাগরিক — এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। নাগরিক হিসেবে আমার সমস্ত অধিকার চাই। এ দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। তখনই দেশের মানুষ এক হবে, নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।”
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যেন রাষ্ট্র হিসেবে এমন একটি উদাহরণ স্থাপন করি, যা পৃথিবী অনুসরণ করতে বাধ্য হয়। বৈষম্য, দুর্নীতি, ঘৃণা ও ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আমরা একটি কল্যাণ ও সমৃদ্ধির রাষ্ট্র গড়তে চাই।”
উল্লেখ্য: ২৪ জুলাইয়ের ‘গণঅভ্যুত্থান’–এর পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা ধরনের জাতীয় সংলাপ, ধর্মীয় সংহতি ও সামাজিক পুনর্গঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ড. ইউনূসের বক্তব্য সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।











