জাতীয় সংবাদ | সুতিয়া নিউজ
বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম
মাননীয় সভাপতি,
আসসালামু আলাইকুম ও শুভ অপরাহ্ণ।
জাতিসংঘের ইতিহাসে পঞ্চম নারী হিসেবে সাধারণ পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এ দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ আপনাকে পূর্ণ সমর্থন দেবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ সনদের আট দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে উপস্থিত সব সদস্য রাষ্ট্রকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এবারের অধিবেশন অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া ও ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
জাতিসংঘের ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতা
গত ৮০ বছরে জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আজও জাতিসংঘের কারণে কোটি মানুষ খাদ্য, টিকা, পানি ও জরুরি সহায়তা পাচ্ছে। তবে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাত ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিসংঘের সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট। তবু সামগ্রিকভাবে এ সংস্থার অবদান মানবজাতির জন্য ইতিবাচক।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তন
মাননীয় সভাপতি,
এক বছর আগে আমি এখানে দাঁড়িয়ে সদ্য সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেছিলাম। আজ বলতে চাই, আমরা কতদূর এগিয়েছি।
বাংলাদেশ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জনগণ বারবার ত্যাগ স্বীকার করেছে। গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের তরুণসমাজ স্বৈরতন্ত্রকে পরাজিত করেছে। আমরা তখন প্রতিশ্রুতি দিই—গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব।
আমরা নির্বাহী আদেশ নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কারের পথ বেছে নিয়েছি। এজন্য ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য নিশ্চিত করেছি এবং “জুলাই ঘোষণা”-র মাধ্যমে টেকসই সংস্কারের অঙ্গীকার করেছি।
মানবাধিকার ও আইনের শাসন
আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী কনভেনশনে যোগদান ও আইন প্রণয়ন চলছে।
নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকলে যোগ দিয়েছি।
মানবাধিকার হাইকমিশনারের মিশন বাংলাদেশে কাজ করছে।
জাতিসংঘ প্রদত্ত সুপারিশ জাতীয় সংস্কার কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সংস্কার ও দুর্নীতি প্রতিরোধ
আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ব্যাপক চিত্র উন্মোচন করেছি।
রাজস্ব আহরণে নীতি ও বাস্তবায়ন পৃথকীকরণের আইন পাস করা হয়েছে।
বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু হয়েছে।
ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতে রেজোলিউশন ও ডিপোজিট প্রটেকশন অধ্যাদেশ প্রস্তুত।
সরকারি ক্রয়ে ডিজিটাল টেন্ডারিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার সংস্কার ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
আমরা পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ ফেরত আনার জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা চাই। একইসাথে, উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে আহ্বান জানাই।
প্রবাসী শ্রমিক ও শ্রম অধিকার
বাংলাদেশি প্রবাসীরা অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছেন।
শ্রম আইন সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।
ট্রেড ইউনিয়ন সহজীকরণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণ চলছে।
অভিবাসন নিরাপদ ও নিয়মিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তরুণ প্রজন্ম ও প্রযুক্তি
৬০% তরুণ জনসংখ্যা—তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তা তৈরিতে সামাজিক ব্যবসা ও উদ্ভাবন উৎসাহিত হচ্ছে।
ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক দায়িত্ব
১.৫° সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা হাতছাড়া হয়ে গেছে।
প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পূরণ হয়নি।
লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড দ্রুত চালু করতে হবে।
বাংলাদেশ অভিযোজন প্রচেষ্টায় স্থানীয় ভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়ন করছে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা সংকট
মায়ানমারের সংঘাত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তহবিল সংকট তীব্র।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
রোহিঙ্গা সংকট কোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়, বরং বৈশ্বিক মানবিক দায়িত্ব।
ফিলিস্তিন সংকট
গাজায় নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছে। বাংলাদেশ জোরালোভাবে দাবি করছে:
১৯৬৭ সালের সীমারেখায় পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ন্যায়ভিত্তিক দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ছাড়া শান্তি আসবে না।
শান্তিরক্ষা, বহুভাষিকতা ও নারী ক্ষমতায়ন
বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় অন্যতম বড় অবদানকারী দেশ।
বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ও ডিপফেকের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
নারীর ক্ষমতায়ন আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার—নারীরা আজ শিক্ষা, গবেষণা, ক্রীড়া ও নেতৃত্বে সমান অবদান রাখছে।
উপসংহার
মাননীয় সভাপতি,
বাংলাদেশ শান্তি, সহযোগিতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি—
“কোনো সংকটই অদম্য নয়, যদি ঐক্য, আস্থা ও সহানুভূতির ভিত্তিতে সবাই মিলে সমাধান খুঁজি।”











