প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর | স্থান: নিউইয়র্ক, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য দিতে উঠে ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের অধিবেশন কক্ষে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে তিনি বক্তব্য দেওয়া শুরু করার পরপরই কক্ষ ত্যাগ করেন বিশ্বের কয়েকশ কূটনীতিক।
সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ওয়াকআউটের মধ্যে শুধু আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতিনিধিরাই ছিলেন না; আফ্রিকার কয়েকটি রাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশের কূটনীতিকও একসঙ্গে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। এই ঘটনা নেতানিয়াহুর বক্তৃতাকে ছাপিয়ে যায়।
ওয়াকআউটের পরিবেশ
বক্তৃতা চলাকালে ব্যাপক ওয়াকআউটের ফলে অধিবেশন কক্ষে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে নেতানিয়াহুর সমর্থকরা জোরে তালি দিয়ে এ ঘটনার প্রভাব আড়াল করার চেষ্টা করেন। সেই তালিদাতাদের মধ্যে ছিলেন নেতানিয়াহুর স্ত্রী এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস।
নেতানিয়াহুর বক্তৃতার মূল বিষয়বস্তু
-
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ প্রসঙ্গ
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ইসরায়েল গত ১২ দিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। সেই লড়াইয়ে ইসরায়েল বড় সাফল্য পেয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। -
হামাস ইস্যু ও সামরিক অভিযান
- নেতানিয়াহু দাবি করেন, হামাসই প্রথম ইসরায়েলের ওপর হামলা চালায়।
- প্রতিরক্ষামূলক কারণে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে।
- ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সামরিক সফলতা অর্জন করেছে, তবে গাজায় এখনো হামাসের যোদ্ধারা রয়ে গেছে।
- তাদের সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে আরও সময় লাগবে।
-
কিউআর কোড বিতর্ক
বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি তার কোর্টে একটি বিশেষ পিন সাঁটিয়ে আসেন।- পিনের সঙ্গে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে উপস্থিতদের হামাসের ভিডিও দেখতে বলেন।
- এই ঘটনা আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
হামাস ও জিম্মিদের প্রসঙ্গ
নেতানিয়াহু বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা ইসরায়েলের ইতিহাসে এক ভয়াবহ আঘাত।
- তিনি বলেন, বিশ্ব হয়তো এ ঘটনা ভুলে গেছে, কিন্তু ইসরায়েলিরা তা কখনো ভুলবে না।
- হামাস যদি অস্ত্র ফেলে দেয় এবং সকল জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তবে যুদ্ধ এখনই থামবে বলে জানান তিনি।
- কিন্তু যতক্ষণ না জিম্মিদের উদ্ধার করা হচ্ছে, ইসরায়েলের অভিযান চলবে।
যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা
নেতানিয়াহু যুদ্ধ শেষে গাজার জন্য একটি রূপরেখা তুলে ধরেন:
- গাজাকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করা হবে।
- সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল।
- গাজায় একটি বেসামরিক সরকার গঠন করা হবে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
প্রচারণা ও সম্প্রচার
নেতানিয়াহুর বক্তব্য শোনানোর জন্য ইসরায়েলি সেনারা গাজা সীমান্তে লাউডস্পিকার বসায়। তিনি দাবি করেন, গাজাবাসীর মোবাইল ফোনেও তার বক্তব্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
- এ সময় তিনি জিম্মিদের উদ্দেশ্যে বলেন: “তোমাদের সবাইকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত থামব না।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ওয়াকআউটের এই ঘটনা জাতিসংঘে বড় ধরনের কূটনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
- বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইসরায়েলের প্রতি বৈশ্বিক অসন্তোষের প্রতিফলন।
- মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু কূটনীতিকও ওয়াকআউটে অংশ নেওয়ায় নেতানিয়াহুর কূটনৈতিক অবস্থান আরও চাপে পড়েছে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল প্রতিবেদন











