স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা | ১১ অক্টোবর ২০২৫
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমানে ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও সরকারের কোনো উপদেষ্টার ‘সেফ এক্সিট’ প্রয়োজন নেই। বরং পুরো জাতিরই সেফ এক্সিট দরকার, সেই ভয়াবহ রাষ্ট্র কাঠামো থেকে যা দীর্ঘদিনের দুঃশাসন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ধ্বংস হয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে আয়োজিত ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া বিষয়ক জাতীয় আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
🔹 “উপদেষ্টাদের নয়, জাতির সেফ এক্সিট দরকার”
ড. আসিফ নজরুল বলেন,
“আমরা উপদেষ্টারা ভালোভাবেই জানি, আমাদের কারও কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। বরং দেশের মানুষের সেফ এক্সিট দরকার, ফ্যাসিবাদী শাসনের সৃষ্ট ভয়াবহ রাষ্ট্র কাঠামো থেকে।”
তিনি আরও বলেন,
“গত ৫৫ বছর আমরা দেখেছি দুঃশাসন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ব্যাংক থেকে সাধারণ মানুষের টাকা লুট। এ ধরনের আত্মবিধ্বংসী কাঠামো থেকে আমাদের জাতির সেফ এক্সিট প্রয়োজন।”
🔹 বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন,
“বাহাত্তরের সংবিধানে বলা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ করবেন। কিন্তু কখনো তা হয়নি। বরাবরই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন,
“আমরা এমন প্রধান বিচারপতিও পেয়েছি, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্র ধ্বংসে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ দেখেও তারা চোখ বন্ধ রেখেছেন।”
🔹 “ভালো আইন নয়, ভালো প্রতিষ্ঠান দরকার”
ড. নজরুল বলেন,
“আমরা ভালো ভালো আইন করতে পারি, কিন্তু ভালো প্রতিষ্ঠান গড়তে পারিনি। আইন প্রণয়নে আমাদের ব্যর্থতা নেই, কিন্তু প্রতিষ্ঠান গঠনে ব্যর্থতা সীমাহীন।”
তিনি আরও বলেন,
“উচ্চ আদালত, সংসদীয় কমিটি ও মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা ছাড়া ভয়াবহ রাষ্ট্র কাঠামো থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।”
🔹 মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা
মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন,
“এটি কোনো একক ব্যক্তির দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। সংশোধিত আইন কমিশনের দক্ষতা ও স্বাধীনতা আরও বাড়াবে বলে আমরা আশা করি।”
🔹 উপস্থিত অতিথিরা
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, সুইস রাষ্ট্রদূত রেতো সিগফ্রেড রেংগলি, ড্যানিশ ডেপুটি হেড অফ মিশন এন্ডার্স বি. কার্লসেন, এবং ইউএনডিপি প্রতিনিধি স্টেফান লিলা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রোমানা শোয়েগার, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আইন, বিচার ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা।
এতে উপস্থিত ছিলেন আইন মন্ত্রণালয় ও মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তারা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।











