নিজস্ব প্রতিবেদক: এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলে’র মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মন্তব্য করেছেন ,“দেশের প্রতিটি অপকর্মকারী’র নামের পাশাপাশি তাদের বাবা-মায়ের নামসহ একটি তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।” এই ঘোষণা দেশে’র প্রশাসনিক মহলে যেমন নতুন করে আলোড়ন তুলেছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝেও তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শুক্রবার পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে বিচার সংস্কার ওগণ পরিষদ নির্বাচনে নতুন সংবিধানে’র দাবিতে রাজনৈতিক কর্মশালা ও সমন্বয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস আলমে’র ভাষ্য অনুযায়ী, “অপরাধীরা যেন লজ্জা পায়, সমাজ যেন জানে কে কোথা থেকে এসেছে-এই লক্ষ্যেই আমরা পরিবারসহ তথ্য প্রকাশে’র কথা ভাবছি। এটি একটি সামাজিক চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে ভবিষ্যতে অপরাধ প্রবণতা কমে।”
তবে প্রশাসনের এমন অবস্থান নিয়ে ইতোমধ্যেই মানবাধিকা’র সংগঠন, শিক্ষাবিদ ও সমাজ তাত্ত্বিকদের মধ্যে দ্বিমত দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, অপরাধী’র দায় তার পরিবার বহন করবে কেন? বাবা-মায়ের নাম প্রকাশ করে পরিবারকে সামাজিক ভাবে হেয় করা নৈতিক বা আইন সঙ্গত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’র সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফুজ্জামান বলেন, “অপরাধের দায় ব্যক্তির। পরিবারে’র নাম প্রকাশ করা হলে সেটি হয়রানি বা সামাজিক শাস্তির শামিল। এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।”
অন্য দিকে কিছু নাগরিক মনে করছেন, এই উদ্যোগ অপরাধীদে’র সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করতে ভূমিকা রাখতে পারে, যা তাদের ভবিষ্যতে অপরাধ থেকে বিরত রাখবে।
আইন বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক মত দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাদিয়া রহমান বলেন,“বাবা-মায়ের নাম প্রকাশে’র মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে কলঙ্কিত করা হলে, তারা আইনি প্রতিকার চাইতে পারেন। এটি মিথ্যা হলে মান হানির মামলা করাও সম্ভব।”
সারাদেশে বর্তমানে জুয়া,মাদক,ভূমিদস্যুতা,চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্ট অপরাধ বাড়তে থাকায়“জনসম্মুখে অপমান” নীতিকে প্রশাসন এখন একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ভাবছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন“কঠোর সময়ের জন্য কঠোর পদক্ষেপ দরকার”, আবার কেউ বলছেন, “সাজা শুধু অপরাধীর জন্য-পরিবার নয়।”
🔻 উপসংহার:
প্রশাসনে’র এমন উদ্যোগ একদিকে যেমন একটি সামাজিক বার্তা পৌঁছে দিতে পারে, তেমনি এটি যদি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মানবিক অধিকার লঙ্ঘন করে, তবে ভবিষ্যতে নানা বিধ জটিলতা তৈরি হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতটা স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা বজায় রাখা যায়।










