স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে। গণভোটের আইনি ভিত্তি তৈরি করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ১৯ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে দ্রুত ‘যথোপযুক্ত আইন’ প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। নথিপত্র এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারি করেন। ওই আদেশের ধারা-৬ অনুযায়ী গণভোট আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করতে হবে। এই আইন প্রণয়নের দায়িত্ব লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ওপর পড়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে অনুস্মারক পাঠিয়েছে।
গণভোট আইন: সময়ের চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গণভোট পরিচালনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন অত্যাবশ্যক। ব্যালট পদ্ধতি, পর্যবেক্ষণ কাঠামো, প্রচারের বিধি এবং ফলাফল চূড়ান্ত করার নিয়ম—সবকিছু আইনেই নির্ধারিত হবে। কিন্তু জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত থাকায় আইন প্রণয়ের জন্য বিকল্প সাংবিধানিক কাঠামো ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
প্রশাসনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করা, বিধিমালা তৈরি এবং নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বাজেট প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
১৯ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব তানিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গণভোট অপরিহার্য। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতির জন্য যথাযথ আইন যত দ্রুত সম্ভব পাস করতে হবে।
উপদেষ্টা পরিষদ: ‘তিন-চার দিনের মধ্যেই আইন’
সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন,
“জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গণভোটের জন্য তিন-চার দিনের মধ্যেই আইন প্রণয়ন করা হবে। চলতি সপ্তাহেই এটি সম্পন্ন হবে।”
উল্লেখ্য, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু এখনো গণভোটসংক্রান্ত কোনো অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করতে পারেনি।
সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন,
“অধ্যাদেশ জারি হলেই নির্বাচন কমিশন কার্যক্রম শুরু করবে।”
বিশেষজ্ঞদের মত: স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণই মূল চাবিকাঠি
প্রশাসনিক আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার জাহিদ রহমান বলেন, গণভোট আইন প্রণয়ন এখন সময়োপযোগী উদ্যোগ। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন,
“গণভোট কীভাবে হবে, ভোট গ্রহণ ও ফলাফল চূড়ান্তকরণের নিয়ম কী—সবকিছু জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা জরুরি। স্বচ্ছতা না থাকলে গণভোটের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাশেদা রওনক মনে করেন, গণভোট কেবল একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়—এটি দেশের রাজনৈতিক আস্থার বিষয়।
তার মতে,
“আইন প্রণয়ন থেকে ফলাফল ঘোষণা—প্রতিটি ধাপ জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করা হলে গণভোট স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। এতে দেশের স্থিতিশীলতা ও আস্থা আরও শক্তিশালী হবে।”
উপসংহার
গণভোট আয়োজনের জন্য আইন প্রণয়ন এখন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে। নির্বাচন সামনে রেখে সময়ের চাপ বাড়ছে, আর সে কারণে আইন, বিধিমালা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে সম্পন্ন হলে সংবিধান সংস্কারসহ জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।











