স্টাফ রিপোর্টার:
বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় বাংলাদেশে সরকারিভাবে এখনো কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) বা সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তিনির্ভর হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা করেছে তুরস্কের ওকান ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে তুরস্ক সরকারের অনুমোদিত মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানি টার্কিশডক।
কোম্পানির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমেরিকা ও জার্মানিসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তুরস্কের এই বিশ্ববিদ্যালয়টির হাসপাতাল রয়েছে। বাংলাদেশেও তারা আধুনিক আইভিএফ হাসপাতাল স্থাপন করতে চায়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শেষের দিকে নির্মাণকাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, হাসপাতালটি নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। চালুর প্রথম দুই বছর তুরস্কের চিকিৎসকরা বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করবেন। এ সময় তারা প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা হাতেকলমে শেখাবেন। পরবর্তীতে হাসপাতালটি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় চিকিৎসকদের মাধ্যমেই পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫টির বেশি আইভিএফ সেন্টার গড়ে উঠলেও, ভুক্তভোগীদের বড় একটি অংশ চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর ভারত, সিঙ্গাপুর বা সম্প্রতি তুরস্কে যাচ্ছেন। এতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ দম্পতি বন্ধ্যত্বে ভুগছেন। বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে এই হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম বলেন, নিম্ন ও মধ্যআয়ের দেশগুলোর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বন্ধ্যত্ব রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যান।
টার্কিশডকের কান্ট্রি হেড এম নুরুজ্জামান রাজু বলেন, “বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি আইভিএফ সেন্টার ভালো সেবা দিচ্ছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। অনেকেই বিদেশে চলে যাচ্ছেন। ফলে বিপুল অর্থ দেশের বাইরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা চাই, দেশের মাটিতেই বিশ্বমানের আইভিএফ হাসপাতাল গড়ে তোলা হোক।”
তিনি জানান, তুরস্কের দুটি বেসরকারি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবং আগামী বছরের শেষের দিকে হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে বোনম্যারো ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ জটিল রোগের চিকিৎসাও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
টার্কিশডকের প্রধান নির্বাহী ফাইক গকসু বলেন, “তুরস্ক বর্তমানে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবার দিক থেকে অন্যতম শীর্ষ দেশ। আমাদের লক্ষ্য, অর্জিত জ্ঞান ও প্রযুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করা। প্রথম ধাপে আইভিএফ, জেনেটিক স্ক্রিনিং ও নারীদের স্বাস্থ্যসেবা শুরু হবে। দ্বিতীয় ধাপে লিভার, কিডনি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম চালু হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে হাসপাতালের অবকাঠামো থাকলেও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও বিশেষজ্ঞ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আমরা তুরস্কের ‘জিরো ইনফেকশন সার্জিক্যাল মডেল’ বাংলাদেশে প্রয়োগ করতে চাই। এতে রোগীরা নিরাপদ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা পাবেন।”










