নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা, বৃহস্পতিবার:> জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন করার লক্ষ্যে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আলাদা করে গুম কমিশন গঠন করা হবে না; মানবাধিকার কমিশনই সেই দায়িত্ব পালন করবে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যৌথভাবে বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের একটা মানবাধিকার কমিশন ছিল, কিন্তু সেটি ছিল খুবই দন্তহীন। সেখানে গুরুতর সমস্যা ছিল—নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি, এখতিয়ারে সীমাবদ্ধতা এবং অযোগ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের কারণে কমিশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আমরা নতুন কমিশনকে আরও ক্ষমতাসম্পন্ন করার চেষ্টা করেছি, যাতে এটি মানবাধিকার রক্ষায় বাস্তব ভূমিকা রাখতে পারে।”
অধ্যাদেশে মানবাধিকারের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিল ও প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে ঘোষিত অধিকারসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, সংবিধানে থাকা মৌলিক অধিকারের বাইরেও বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে অনুসমর্থন দিয়েছে, সেই অধিকারের সুরক্ষায়ও কমিশন কাজ করতে পারবে।
নতুন বিধান অনুযায়ী, মানবাধিকার কমিশন গঠিত হবে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য নিয়ে। চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের দায়িত্বে থাকবে আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বাছাই কমিটি।
আসিফ নজরুল বলেন, “আগের কমিশনের সীমাবদ্ধতা ছিল—আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তাদের তদন্তের ক্ষমতা ছিল না। নতুন অধ্যাদেশে কমিশনকে এসব ক্ষেত্রেও তদন্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
তিনি আরও জানান, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও গুমের শিকারদের সুরক্ষা সংক্রান্ত আইনের দায়িত্বও মানবাধিকার কমিশনই পালন করবে। হেফাজতে মৃত্যু প্রতিরোধ আইনসহ অন্যান্য মানবাধিকারসংক্রান্ত আইনেও কমিশনকে তদন্তের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কমিশনের আদেশ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “নতুন এই কমিশন দেশের মানবাধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং গুম, নির্যাতনসহ সব ধরনের লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সত্যিকারের প্রতিকার নিশ্চিত করবে।”











