বাংলাদেশের সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আদালত বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্বের রায়টিকে অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করেছে। আদালত জানায়—এই রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরায় “সক্রিয় ও প্রয়োগযোগ্য” হলো এবং ভবিষ্যতে এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ জনাকীর্ণ আদালতকক্ষে এ ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে। আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, আগামী চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আপিল বিভাগের রায়ের মূল দিকগুলো
সংক্ষিপ্ত আদেশে আদালত উল্লেখ করে—
- আপিল ও রিভিউ আবেদনগুলো সর্বসম্মতভাবে মঞ্জুর করা হলো।
- বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত পূর্বের রায়টি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় সম্পূর্ণরূপে বাতিল ঘোষণা করা হলো।
- সংবিধানের চতুর্থ ভাগের ২ক অনুচ্ছেদে থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানাবলি পুনরুজ্জীবিত হলো।
- এসব বিধান শুধুমাত্র ভবিষ্যতে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর কার্যকর হবে।
- পূর্ণাঙ্গ রায় পরে প্রকাশ করা হবে।
রাজনৈতিক অঙ্গন ও নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়া
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা বলেন—
“তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, তবে এটি কার্যকর হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর। সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিধান পুনরায় কার্যকর হবে।”
তিনি আরও জানান, এ রায় ভবিষ্যতের নির্বাচনে সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের নিশ্চয়তা দেবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন—
- “এই রায় দেশের গণতান্ত্রিক পথে ফেরার একটি বড় পদক্ষেপ।”
- দিনের ভোট রাতে হওয়ার অভিযোগ ভবিষ্যতে আর থাকবে না—এ আশা প্রকাশ করেন।
- তার ভাষ্য অনুযায়ী, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানসম্মত হিসেবে পুনর্গৃহীত হলো।
বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
বিএনপি নেতারা রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের ভাষ্য—
- এটি দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের মাইলফলক।
- নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনবে।
বিএনপি মহাসচিবের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন—
“রায়টি দেশের মানুষের ভোটাধিকার সুরক্ষার পথ খুলে দিয়েছে।”
সুজনের প্রতিক্রিয়া
রিভিউ আবেদনকারী সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জানায়—
- পূর্বের রায় নির্বাচনব্যবস্থাকে “সংকটে” ফেলেছিল।
- বর্তমান রায়ের ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত হলো।
বিতর্কিত রায় ও রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষাপট
২০১১ সালে তৎকালীন আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়। পরে বিভিন্ন নাগরিক, সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতারা ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে এসব আবেদনের ওপর শুনানি চলে এবং ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়। অবশেষে ২১ নভেম্বর আপিল বিভাগ সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে রায় ঘোষণা করে।
রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া কী হবে?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে—
- সংসদ ভেঙে গেলে ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।
- বর্তমান সময়ে সংসদ ভেঙে যাওয়ার প্রক্রিয়া না থাকায়, এ ব্যবস্থা পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কার্যকর হবে।
- এটি কার্যকর হবে চতুর্দশ সংসদের মেয়াদের পরবর্তী পর্যায়ে।










