স্টাফ রিপোর্টার:
ইসলামে বিয়ে শুধু সামাজিক চুক্তি নয়, বরং এটি একটি ধর্মীয় ইবাদত। বিয়ের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈধ ও পবিত্র সম্পর্ক স্থাপিত হয়, যা মানুষকে গুনাহ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিয়ে করল, সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল। অতএব বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।” (বায়হাকি, শুআবুল ইমান)
অন্য হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “হে যুবকরা! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম, সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে করলে দৃষ্টিকে নিচু রাখা যায় এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করা যায়।” (বুখারি, মুসলিম)
ফিকহে হানাফি মতে বিয়ের শর্ত
হানাফি মাযহাব অনুসারে, একটি নিকাহ বৈধ হওয়ার জন্য চারটি মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হয়—
১. ইজাব (প্রস্তাব) – এক পক্ষের স্পষ্ট প্রস্তাব।
২. কবুল (গ্রহণ) – অপর পক্ষের সম্মতি।
৩. স্পষ্ট বাক্য – এমন শব্দ ব্যবহারে যা দ্বারা নিকাহ বোঝা যায়।
৪. সাক্ষী – দুইজন পুরুষ অথবা এক পুরুষ ও দুই নারী সাক্ষীর উপস্থিতি।
‘কবুল’ না বলেও বিয়ে সহীহ হয়
ফিকহি কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে, ‘কবুল’ শব্দটি ব্যবহার না করলেও যদি অন্য শব্দের মাধ্যমে সম্মতির প্রকাশ ঘটে এবং তা নিকাহের অর্থ স্পষ্ট করে, তাহলে বিয়ে বৈধ হয়।
যেমন—
قَبِلتُ (ক্ববিলতু) – আমি গ্রহণ করলাম
رَضِيتُ (রদ্বিতু) – আমি রাজি হলাম
تَزَوَّجْتُهَا (তাযাওয়াজ্তুহা) – আমি তাকে বিবাহ করলাম
أَجَزْتُهُ (আজাযতুহু) – আমি অনুমোদন করলাম
ইসলামী ফিকহ থেকে দলিল
ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া-তে বলা হয়েছে,
“নিকাহ সেইসব স্পষ্ট শব্দ দ্বারা জায়েয হয়, যেমন أنكحتُ, تزوجتُ, قبلتُ, رضيتُ ইত্যাদি।”
হেদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে,
“ইজাব ও কবুল এমন শব্দে হতে হবে, যা দ্বারা স্পষ্টভাবে নিকাহ বোঝায়।”
দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুখতার-এ বলা হয়েছে,
“যে সব শব্দ বর্তমান সময়ে স্ত্রীত্ব গ্রহণ বোঝায়, যেমন زوجتك, أنكحتك, تزوجت — সেসব দ্বারা নিকাহ সহীহ হয়।”
কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টান্ত
কোরআনে আল্লাহ বলেন,
“ফَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ”
অর্থ: ভদ্রভাবে স্ত্রীর সঙ্গে জীবন যাপন করো, কিংবা সম্মানের সঙ্গে তাকে বিদায় দাও। (সূরা আল-বাকারা, ২:২২৯)
এ আয়াতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মতি ও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ধারণা প্রকাশ পেয়েছে, যা নিকাহে “কবুল”-এর মর্ম বোঝায়।
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে—
“النكاح عن تراضٍ”
অর্থ: নিকাহ পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। (ইবনু মাজাহ)
উপসংহার
ফিকহে হানাফি মতে, যদি প্রেক্ষাপট স্পষ্ট হয় এবং সাক্ষীদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের সম্মতি প্রকাশ পায়, তাহলে ‘কবুল’ শব্দ উচ্চারণ না করলেও নিকাহ সহীহ ও বৈধ।
তবে সমাজে বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে ধর্মীয় ও সামাজিক উভয় দিক থেকেই “আমি কবুল করলাম” বাক্যটি ব্যবহার করাই সর্বোত্তম।
🔹 সূত্র: ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, হেদায়া, দুররুল মুখতার, বায়হাকি, বুখারি, মুসলিম, ইবনু মাজাহ












