তারিখ: ১২ অক্টোবর ২০২৫
নিউজ ডেস্ক রিপোর্ট:
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
রবিবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় চালানো অভিযানে ২০০ জনেরও বেশি আফগান যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। পাল্টা বিবৃতিতে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার দাবি করেছে, পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার জবাবে তাদের প্রতিরোধে ৫৮জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৩০জন আহত হয়েছে।
তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগান বাহিনী সীমান্তের কুনার ও হেলমান্দ প্রদেশে তিনটি পাকিস্তানি চৌকি দখল করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করেছে তারা ১৯টি আফগান চৌকি দখল এবং তালেবান ঘাঁটি ধ্বংস করেছে।
সংঘর্ষের পটভূমি
সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হয় বৃহস্পতিবার আফগান ভূখণ্ডে এক বিস্ফোরণের পর, যার জন্য তালেবান পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও দাবি করেছে, আফগানিস্তান তাদের ভূখণ্ডে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP) ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে।
এক সূত্র জানায়, পাকিস্তানি বাহিনী আফগানিস্তানের কাবুলে TTP নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তবে এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ইরান, সৌদি আরব এবং কাতার দুই দেশকেই সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, “উভয় দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা আঞ্চলিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
নিরাপত্তা হুমকি ও মানবিক সংকট
পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (PICSS) অনুযায়ী, আগস্ট মাসে দেশটিতে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে—মাত্র এক মাসেই ১৪৩টি হামলায় ১৯৪ জন নিহত হয়।
আফগান সীমান্তে টিটিপি ও অন্যান্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান চলমান থাকায় হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিপজ্জনক মোড়: ভারতকে জড়িয়ে উত্তেজনা
সাম্প্রতিক উত্তেজনার মাঝে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে যান, যা পাকিস্তানের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পাকিস্তান ভারতকে “এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের বড় পৃষ্ঠপোষক” হিসেবে অভিযুক্ত করে। তবে নয়াদিল্লি এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্ত সংঘর্ষ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস দুই দেশের সম্পর্ককে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যার প্রভাব পড়তে পারে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়।
শেষ কথা
পাক-আফগান সীমান্তে এই সামরিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে, তা আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন দরকার জোরালো কূটনৈতিক মধ্যস্থতা ও আলোচনার উদ্যোগ।










