ঢাকা, ১২ অক্টোবর:
গুম ও খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান। অভিযুক্ত আরও একজন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কবির ৯ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া চার্জশিটে ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন কর্মরত, একজন এলপিআরে (অবসরোত্তর ছুটি) এবং ৯ জন ইতোমধ্যেই অবসরে গেছেন।
“আমরা ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম। তাদের মধ্যে ১৫ জন সেনা হেফাজতে আছেন। একজন এখনো আসেননি। তিনি মেজর জেনারেল কবির। ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পর তিনি আর ফেরেননি এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন,” বলেন মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান।
তিনি আরও জানান, নিখোঁজ কর্মকর্তার সন্ধানে সেনাবাহিনী বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে যাতে তিনি অবৈধভাবে দেশ ত্যাগ না করতে পারেন।
চার্জশিট ও সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম তিনটি চার্জশিট জমা পড়ে। এর মধ্যে একটি গুমসংক্রান্ত, আরেকটি ডিজিএফআই ও র্যাবের সংক্রান্ত এবং আরেকটি রামপুরায় ৪-৫ আগস্টের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে।
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন,
“আমরা কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হাতে পাইনি, শুধু টিভি স্ক্রল ও গণমাধ্যমে জেনেছি। এরপরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সেনাবাহিনী নিজ উদ্যোগে অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়েছে।”
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সবসময় আইন এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে অভিযোগপত্রে নাম আসার অর্থ এই নয় যে কেউ দোষী।
আইসিটি আইন বনাম সেনা আইন: সাংঘর্ষিক অবস্থান নয়
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
“আইসিটি আইন বনাম সেনা আইন— এভাবে মুখোমুখি বিষয়টি দেখা উচিত নয়। অভিযুক্ত প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে সাজাপ্রাপ্ত বলা যাবে না।”
তিনি বলেন,
“যদি কেউ খালাস পান, তাহলে তিনি চাকরিতে ফেরার অধিকার রাখেন। তবে বিচার চলাকালীন কেউ যদি চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম করে ফেলেন, তাহলে খালাস পাওয়ার পরও ফিরে আসা সম্ভব নাও হতে পারে।”
সেনা সদস্যদের মনোবলে প্রভাব
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে তিনগুণ শক্তি দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ঘটনা সেনা সদস্যদের মনোবলে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে বলেও জানান তিনি।
“আমরা সব সময় ন্যায়ের পক্ষে আছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাস্টিসের পক্ষে অটলভাবে থাকবে।”
অবসরপ্রাপ্তদের গ্রেপ্তার বিষয়ে অবস্থান
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অবসরপ্রাপ্তদের সেনাবাহিনী সরাসরি হেফাজতে নিতে পারে না। তবে তারা চাইলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা চাইতে পারেন। পুলিশ চাইলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ ও আদালতে হাজিরার নির্দেশ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের ২২ অক্টোবরের মধ্যে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে। এ বিষয়ে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন,
“আইনি ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।”
পটভূমি:
৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৪ জন বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২২ অক্টোবরের মধ্যে অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করতে হবে।
সংক্ষেপে মূল তথ্য:
- চার্জশিটে ২৫ সেনা কর্মকর্তার নাম
- সেনা হেফাজতে ১৫ জন
- একজন (মেজর জেনারেল কবির) নিখোঁজ
- ৯ জন অবসরে, ১ জন এলপিআরে
- ২২ অক্টোবর আদালতে হাজির করার নির্দেশ
- সেনাবাহিনী বলছে: “আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে”










