ব্রহ্মপুত্র নদ এশিয়ার একটি বৃহৎ ও ঐতিহাসিক নদী। প্রায় ২,৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী তিব্বতের কৈলাস পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারত ও বাংলাদেশ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এর বিশাল ভৌগোলিক বিস্তৃতি, জলপ্রবাহ এবং মানুষের জীবন-অর্থনীতিতে প্রভাবের কারণে নদীটি শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়; বরং বহু মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।


উৎপত্তি ও প্রবাহপথ

তিব্বতে ‘ইয়ারলুং ত্সাংপো’ নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্র হিমালয় পেরিয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে এ নদী যমুনা নামে পরিচিত। পরবর্তীতে গঙ্গা ও মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে এই নদী বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


অর্থনীতি ও মানুষের জীবিকার সঙ্গে সংযোগ

বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য এবং নৌপরিবহনে ব্রহ্মপুত্রের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার পানিতে এনে দেওয়া পলি জমিকে উর্বর করে তোলে, যা ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।
চরাঞ্চলে কৃষিকাজ, মাছধরা এবং বালু আহরণ অনেক মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস। নদীকেন্দ্রিক এই অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে।


বন্যা ও নদীভাঙন: প্রকৃতির চ্যালেঞ্জ

বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল বা অতিবৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র কখনো কখনো বন্যা ও নদীভাঙনের সৃষ্টি করে। এতে বসতভিটা, ফসল ও সম্পদের ক্ষতি হয়। তবুও নদীঘেঁষা মানুষের জীবন ও অর্থনীতি এই নদীর ওপরই নির্ভরশীল।


সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ব্রহ্মপুত্র

লোকসংগীত, সাহিত্য, মৌখিক ইতিহাস ও আঞ্চলিক সংস্কৃতিতে ব্রহ্মপুত্র বারবার উঠে এসেছে। নদীটি কেবল একটি প্রাকৃতিক জলাধার নয়—বরং মানুষের ইতিহাস, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের প্রতীক।


সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ গুরুত্ব

ব্রহ্মপুত্র তার বিশালতা এবং বহুমাত্রিক অবদানের কারণে এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনরেখা হিসেবে বিবেচিত। নদীর সঠিক সংরক্ষণ, টেকসই ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।