আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ৯ অক্টোবর ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত গাজা শান্তিচুক্তির প্রথম পর্যায়ে স্বাক্ষর করেছে। ট্রাম্পের ভাষায়, এটি মধ্যপ্রাচ্যে “একটি টেকসই ও স্থায়ী শান্তির প্রথম পদক্ষেপ”।
ট্রাম্প বলেন, “আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে ঘোষণা করছি যে ইসরাইল এবং হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে স্বাক্ষর করেছে।”
তিনি আরও জানান, এই পর্যায়ে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, এবং ইসরাইল তাদের সেনাবাহিনী একটি ‘সম্মত রেখায়’ প্রত্যাহার করবে।
এই ঘোষণাটি ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করেন। তিনি এই দিনটিকে “আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরাইল, আশপাশের দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি মহান দিন” হিসেবে অভিহিত করেন।
মধ্যস্থতাকারীদের প্রশংসা
ট্রাম্প তুরস্ক, কাতার ও মিশরের মতো গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আলোচনার পেছনে ছিলেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা ও সাবেক উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার। অংশগ্রহণ করেন তুর্কি গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিন, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি, মিশরের গোয়েন্দা প্রধান হাসান রাশাদ এবং ইসরাইলি কৌশলগত মন্ত্রী রন ডার্মার।
২০ দফা পরিকল্পনা
চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ২০-দফা পরিকল্পনায় গাজায় বন্দী ইসরাইলিদের মুক্তি, যুদ্ধবিরতি, এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হামাস সূত্র জানিয়েছে, গোষ্ঠীটি নীতিগতভাবে এই পরিকল্পনার প্রতি সম্মতি দিয়েছে।
চুক্তির পরবর্তী ধাপগুলিতে থাকবে যুদ্ধবিরতির দীর্ঘায়ন, মানবিক সহায়তা প্রবাহ, গাজার পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে আলোচনা।
পরবর্তী পদক্ষেপ
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “আমাকে একটি নোট দেওয়া হয়েছে যে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি এবং খুব শীঘ্রই সেখানে আমার প্রয়োজন হতে পারে।”
ট্রাম্পও জানিয়েছেন যে তিনি সপ্তাহান্তে মিশর সফরের পরিকল্পনা করছেন, যা হতে পারে এই চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় মার্কিন ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করার ইঙ্গিত।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়
জাতিসংঘ ও গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি সামরিক অভিযানে প্রায় ৬৭ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজা প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে এটি হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা। তবে চূড়ান্ত শান্তি এখনও অনেক ধাপ দূরে। আস্থার সংকট, রাজনৈতিক চাপ ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এই চুক্তির দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, এপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান











